বিজয়ের মাস। স্বাধীনতা অর্জনে আমাদের কোন ভুমিকা না থাকলেও আমরা স্বাধীনতা রক্ষায় আমরা ভুমিকা রাখতে পারি। সবার দিন ভালোভাবে কাটুক এই আশা কামনা করে আজকের টিউন শুরু করছি।
ভাইরাস একটি অতি ক্ষুদ্র স্বত্তা যা রোগ সৃষ্টি করে। আজ এই অতি ক্ষুদ্র ভাইরাস কোটি কোটি মানুষকে নাজেহাল করেছে। আজ লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ এই ভাইরাস। ভাইরাসের কারণে কত পরিবারের সদস্যের পেটে পরিপুর্ণ আহার যায় না। লাখ লাখ মানুষ হয়ে পরেছে দিশেহারা। সেই ভাইরাস সম্পর্কে কিছু জানা গুরুত্বপূর্ণ না হয়ে পারে। তাই আজকের টিউনে এ বিষয়ে সামান্য জ্ঞান আপনাদের সাথে বাটতে এসেছি।
ভাইরাস
ল্যাটিন শব্দ ভাইরাস এর পারিভাষিক অর্থ হলো বিষ। এটি এত ছোট যে একে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখতে হয়।
ভাইরাস হলো অতি অণুবীক্ষণিক সত্তা যা রোগ সৃষ্টিকারী।
এটির গাঠনিক উপাদান নিউক্লিক এসিড ও প্রোটিন। জীব দেহ কোষ দিয়ে গঠিত এটা আমরা সকলেই জানি, কিন্তু ভাইরাস অকোষীয়। ভাইরাস জীব দেহের বাইরে সবসময় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে।
ভাইরাস এর সাথে জড়িত কিছু বিজ্ঞানীর নাম
বিজ্ঞানী বেইজেরিংক প্রথম ভাইরাস নামটি প্রবর্তন করেন।
তামাক গাছের মোজাইক রোগের কারণ হিসেবে ভাইরাসের উপস্থিতি প্রমাণ করেন বিজ্ঞানী আইভানোভসকি তিনি ভাইরাসের আবিষ্কারক।
ভাইরাসের দেহ প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড দিয়ে গঠিত। এটি প্রমাণ করেন ভাইরোলজির জনক স্ট্যানলি।
আয়তন
ভাইরাস সাধারণত ১২ nm থেকে ৩০০ nm হয়ে থাকে। সবচেয়ে ক্ষুদ্র ভাইরাস হচ্ছে গবাদি পশুর ফুট এন্ড মাউথ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস (৮-১২ nm)।
ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য
ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য সমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- ক) জর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এবং
- খ) জীবীয় বৈশিষ্ট্য।
ক) জর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য
- ভাইরাস অকোষীয়।
- ভাইরাস জীবকোষের সাহায্য ছাড়া স্বাধীনভাবে প্রজনন ক্ষম নয়।
- ভাইরাসের দৈহিক বৃদ্ধি নেই।
- ভাইরাস পরিবেশের উদ্দীপনায় সাড়া দেয় না।
- ভাইরাস এসিড ক্ষার ও লবণ প্রতিরোধে সক্ষম এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে না।
খ) জীবীয় বৈশিষ্ট্য
- পোষক কোষের অভ্যন্তরে ভাইরাস সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
- একটি ভাইরাস হুবুহু আরেক ভাইরাস জন্ম দিতে পারে।
- গাঠনিক ভাবে ভাইরাসের নিউক্লিক অ্যাসিড আছে।
- ভাইরাস মিউটেশন ঘটাতে এবং প্রকরণ তৈরি করতে সক্ষম।
- এদের অভিযোজন ক্ষমতা আছে।
- জিনগত পুনর্বিন্যাস ঘটতে দেখা যায়।
ভাইরাসের প্রকারভেদঃ
নিউক্লিক এসিডের ধরন অনুযায়ী ভাইরাস দুই প্রকারঃ
DNA ভাইরাস
ভাইরাসে নিউক্লিক এসিড হিসেবে যদি DNA পাওয়া যায় তাহলে সেইসব ভাইরাস কে DNA ভাইরাস বলে। যেমন- ভ্যাকসিনিয়া, ভ্যারিওলা, হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস ইত্যাদি।
RNA ভাইরাস
ভাইরাসে নিউক্লিক এসিড হিসেবে যদি RNA পাওয়া যায় তাহলে সেইসব ভাইরাস কে RNA ভাইরাস বলে। যেমন-TMV, HIV, Rabbis, Corona ইত্যাদি ভাইরাস।
ভাইরাসের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
ক) ভাইরাসের অপকারিতা
১.মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি করে। যেমন:
- হেপাটাইটিস -বি ভাইরাস জন্ডিস সৃষ্টি করে।
- HIV মানুষের শরীরে মরণব্যাধি AIDS সৃষ্টি করে।
- ফ্লাভি ভাইরাস মানুষের ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী।
- কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক র্যাবিস ভাইরাসের কারনে।
- সাধারণ সর্দি Rhino ভাইরাস এর কারনে।
২.উদ্ভিদে রোগ সৃষ্টি করে। যেমন:
- টুংরো ভাইরাসের কারনে ধানের টুংরো রোগ।
- TMV এর কারনে তামাকের মোজাইক রোগ।
- গোল আলুর মোজাইক রোগ PMV
- BMV এর কারনে সিমের মোজাইক রোগ।
খ) ভাইরাসের উপকারিতা
- বসন্ত, পোলিও, এবং জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক টিকা ভাইরাস দিয়ে তৈরি করা হয়।
- ভাইরাস হতে জন্ডিস রোগের টিকা তৈরি করা হয়।
- ভাইরাসকে বর্তমানে বহুল আলোচিত জেনেটিক প্রকৌশল এর বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
- ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে ভাইরাস ব্যবহার করা হয়।
- কতিপয় ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমনে ভাইরাস এর ভূমিকা উল্লেখ করার মতো।
- ভাইরাস আক্রমণের ফলে ফুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং ফুলের মূল্য বেড়ে যায়।
- অস্ট্রেলিয়ায় খরগোশের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে ফসলের চরম ক্ষতি হয়েছিল। ভাইরাসের সাহায্যে তাদের সংখ্যা কমানো হয়েছে।
নভেল করোনা ভাইরাস
ভাইরাসটির নাম SARS CORONA VIRUS(COV) -2।
আক্রমণের ফলে মানুষের COVID 19 রোগ হয়।
COVID এর পূর্ণরূপ Corona Viarus Disease।
এটি একটি RNA ভাইরাস।
প্রধানত শ্বসনতন্ত্রে সক্রমন ঘটায়।
জুন আলমেইডা হলেন একজন স্কটিশ ভাইরোলজিস্ট। তিনি ১৯৬৪ সালে প্রথম Corona ভাইরাস আবিস্কার করেন। এই ভাইরাসটি তিনি লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে শনাক্তকরণ করেণ।
পরিশেষে বলতে চাই যে, আপনারা সবাই সতর্ক থাকবেন ভাইরাস থেকে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।